মিশরে অনাবৃষ্টির ফলে ভীষণ দুর্ভিক্ষ দেখা দিলো। দীর্ঘদিন পর্যন্ত আকাশে মেঘমালা দেখা গেলো না। প্রচন্ড খড়ই, নদী, নালা, খাল-বিল সবই শুকিয়ে গেল। পানির অভাবে লোকজন খেতকামারে কাজ করতে না পারায়, ফসলের মুখ ও তারা দেখতে পেলো না। এতে মানুষ তো মরতে লাগলই জীব জানোয়ারের জন্য জীবন ধারণের আহার পর্যন্ত মিলল না। নারী, পুরুষ ও ক্ষুধার্ত শিশুদের করুণ আর্তনাদে আকাশ, বাতাস ভারী হয়ে উঠলো। নিরন্ন বুভুক্ষ মানুষের চোখ বেয়ে অশ্রুর বন্যা বয়ে চললো কিন্তু আকাশ সামান্য পানিতেও ভিজে উঠলো না। বর্ষণ করলো না একফোঁটা বৃষ্টি।
অবশেষে কিছু লোক একত্রিত হয়ে সেখানকার প্রখ্যাত বুজুর্গ হজরত মিশ্রী রহমতুল্লাহি আলাইয়ের দরবারে এসে বলল জানাব, আপনি তো আমাদের বর্তমান অবস্থা প্রত্যক্ষ করছেন, তাই অন্তত এই নিরন্ন ক্ষুধার্ত মানুষের করুন অবস্থার প্রতি তাকিয়ে আল্লাহর দরবারে একটু প্রার্থনা করুন। আমরা আশা করি আল্লাহতালা আপনার মত বুজরুগ্গ ব্যক্তির দোয়া ফিরিয়ে দেবেন না।
হজরত রহমতুল্লাহি আলাই তাদের কথা মনোযোগ সহকারে শুনলেন ঠিকই কিন্তু তাদের আবেদন মতো দোয়া না করে তৎক্ষণাৎ মিশর ছেড়ে মাদায়ান চলে গেলেন। তার এই চলে যাওয়াতে সকলে যারপর নাই বিস্মিত হলো কিন্তু ক্ষুদ্রতের খেলা বুঝা বড়ই মুশকিল। তিনি চলে যাওয়ার কয়েকদিন পরেই মিশরে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হলো ফলে খাল বিল নদীনালা পানিতে ভরে উঠলো। মানুষ রক্ষা পেল দুর্ভিক্ষের মরণ ছোবল থেকে।
বৃষ্টি হওয়ার সংবাদ হজরাত মিশ্রী রহমতুল্লাহি আলাইয়ের নিকট পৌঁছিলে তিনি মিশরে ফিরে এলেন। তখন তার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু জিজ্ঞাসা করলেন লোকজন আপনার নিকট প্রার্থনার জন্য এসেছিল, কিন্তু কেন আপনি প্রার্থনা না করে মিশর ছেড়ে চলে গেলেন? আর কেনই বা আপনার চলে যাওয়ার পরপরেই বৃষ্টি হল। নিশ্চয়ই এর মধ্যে কোন রহস্য লুকিয়ে আছে।
হজরত মিশ্রী রহমতুল্লাহ বিভিন্ন ভাবে পাশ কাটার চেষ্টা করলেন। কিন্তু নাছোড়বান্দা, বন্ধুর সীমাহীন পীরা পিরিতে অবশেষে বলতে বাধ্য হলেন যে, লোকেরা যখন আমার নিকট প্রার্থনার জন্য আসলো তখন আমি গভীর চিন্তায় নিমগ্ন হলাম, ভাবলাম পৃথিবীতে যখন অধিক পরিমাণে আল্লাহ নাফরমানি হতে থাকে, লোকজন যখন আল্লাহকে ভুলে বসে, তখনই আল্লাহতালা অসুন্তুষ্ট হয়ে তাদেরকে সতর্ক সংকেত স্বরূপ বিভিন্ন আজাব গজবে গ্রেফতার করেন।
আর এ থেকে মুক্তি পাওয়ার একমাত্র পথ হলো তওবা করা এবং সৎ পথ অবলম্বন করা। আমি মনে করেছি বর্তমান মিশরের এই দুরবস্থা আমার কারণেই হয়েছে। কেননা আমি অনেক চিন্তা ভাবনা করে দেখেছি যে মিশরের সবচেয়ে বড় গুনাহগার আমি। তাই আমার হৃদয় বারবার আমাকে ভৎসনা করছিল, যে হ্যাঁ জুল্লুন, তোমার গুনাহের কারণে মিশরে এই দুর্যোগের। সুতরাং মিশরের এই তুমি এক্ষুনি মিশর ছেড়ে অন্যত্র চলে যাও।
তাই আমি মিশর ছেড়ে চলে গিয়েছি। আমার ধারণা যে বাস্তবিক সত্য তা আপনারা নিজেই প্রত্যক্ষ করেছেন। কেননা আপনারা দেখেছেন যে আমি চলে যাওয়ার পরপরই মিশরে বৃষ্টি হয়েছে। আসলে কি সত্যের জন্য এত বড় গুনাহগার ছিলেন? যার কারণে আল্লাহতালা তার রহমতের বাণীধারা বন্ধ করে দিয়েছিলেন।সীমাহীন কষ্টকলে সে নিপতিত হয়েছিল সমগ্র মিশরবাসী। মূল ব্যাপার আসলে তা নয়।
কারণ ছিলেন একজন আল্লাহর প্রিয় বান্দা, সেই জন্যই তো মানুষ তার কাছে প্রার্থনার আবেদন জানিয়েছিল। কিন্তু এত বড় আল্লাহর অলি হওয়া সত্ত্বেও তিনি ক্ষুধার দরবারে নিজেকে অত্যন্ত ছোট ও চরম অপরাধী হিসাবে উপস্থাপনা করেছেন। তিনি বলেছেন হে প্রভু আমি অপরাধী। আমার অপরাধের কারণেই মিশরে এই দুর্যোগের ঘনঘটা। তার এই বিনয় আজিজি অ্যান্ড কেশারি আল্লাহর নিকট এতই পছন্দ হয়েছে যে তিনি মিশরবাসীর সমস্ত গুনাহ মাফ করে দিয়ে তা রহমতের বীজটি পুনরায় চালু করে দিলেন।
ফলে মিশরবাসীর বিপদ কেটে গেল ক্ষুধার্ত মানুষের মুখে আবারও ফুটে উঠলো পরিতৃপ্তির হাসি। সুতরাং আমরা ও কি পারি না আল্লাহর দরবারে নিজেকে এমনভাবে উপস্থাপন করতে। প্রকৃতপক্ষে বিনয় ও নম্রতা মানুষের এমন এক মহৎ গুণ যার মাধ্যমে জগতের বড় বড় সমস্যারও সুষ্ঠু সমাধান হয়ে যায়। ঘটে যায় দীর্ঘকাল ধরে চলমান দ্বন্দ্ব সংঘাতের অবসান। প্রান্তরে অহংকার ও আমি তো এমন এক আপদ যা মানব জীবনে চরম অবনতি ও ধ্বংস ডেকে আনে। অধিকন্ত আল্লাহতালা কারীদেরকে মোটেও ভালোবাসেন না।
এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যার অন্তরে বিন্দুমাত্র অহংকার থাকবে। সে কখনো জান্নাতে যেতে পারবে না। অপরদিকে বিনয় সম্পর্কে তিনি বলেছেন যেই ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নম্রতা ও বিনয় অবলম্বন করবে. আল্লাহ তালা তার মর্যাদাকে বাড়িয়ে দিবেন। তাই আসুন আজ থেকে অহংকার ও আমিত্ত নামক এই মারাত্মক ব্যাধিকে চিরতরে অন্তর থেকে বের করে দাফন করে দেই. এবং শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই সকল ক্ষেত্রে বিনয় ও অবলম্বন করি আল্লাহ আমাদের তৌফিক দান করুন।