কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে শুরু. আর শেষটা হলো বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ স্বৈরশাসনের পতনের মাধ্যমে. কেন হঠাৎ পদত্যাগ করতে বাধ্য হলেন শেখ হাসিনা. এর পেছনে কি শুধুই কোটা সংস্কারই ছিল? চলুন জেনে আসি বিস্তারিত। পুরো কোটা সংস্কার আন্দোলনটি।
১৯৭২ বাংলাদেশের সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে প্রথম কোটার প্রবর্তন করা হয়। ২০১৮ পর্যন্ত সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে মোট কোটা ছিল ৫৫ শতাংশ। যার মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০। নারী কোটা ১০ শতাংশ। জেলা কোটার ১০ শতাংশ। ক্ষুদ্র জাতি গোষ্ঠী কোটা ৫ শতাংশ ও প্রতিবন্ধী কোটা ১ শতাংশ। তবে সমস্যা যেটা হয় তা হচ্ছে বেশিরভাগ চাকরি প্রত্যাশীদেরই ছিল না কোনো কোটা। অর্থাৎ তাদের সবার প্রতিযোগীতা করা লাগতো মাত্র ৪৪ শতাংশ সিটের জন্য।
এই বৈষম্যের কারণে ২০১৮ জানুয়ারী থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের প্রায় সবগুলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের রাস্তায় নামেন। তাদের দাবি ছিল কোটা সংস্কার করা
। যেন মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের সুযোগ তৈরি হয়। এছাড়াও তখন সরকারের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ ওঠে যে এই কোটার ব্যবহার করে সরকার তার অনুগত লোকদের সব খাতে বসাচ্ছেন যেন সব ক্ষেত্রেই আওয়ামী লীগ সরকারের নিয়ন্ত্রণ থাকে।
শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে দেশের বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে অবস্থান নেন। তাদের দাবির জবাবে তৎকালীন কৃষিমন্ত্রী মোতিয়া চৌধুরী সংসদে দাঁড়িয়ে বলেন মুক্তিযোদ্ধারা কোটা পাবে না? তো কি রাজাকারের বাচ্চারা কোটা পাবে? তার এই বক্তব্যের ফলে ফেটে পড়ে ছাত্রসমাজ। আরো জোরদার হয় আন্দোলন। কিন্তু সেই আন্দোলন দমাতে সরকার পুলিশ ও ছাত্রলীগকে দায়িত্ব দেয়। একদিকে পুলিশ tearshill ও লাঠি চার্জ করে অন্যদিকে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে নিরস্ত্র ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর।
এই হামলায় বহু শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হামলার ভিডিও ছড়িয়ে যায় দেশ বিদেশে। সরকার Facebook সহ বেশ কিছু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ করে দেয়। কিন্তু ইতিমধ্যেই এই হামলার ঘটনা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের নজর কাড়ে এবং অনেকটা চাপে পড়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কোটা প্রথা বাতিল করে দেন এবং শেষ হয় আন্দোলন। ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর কোটা বাতিল করে প্রজ্ঞাপনও জারি করে সরকার।
এরপর কেটে যায় ছয় বছর। ২০২৪ নির্বাচনে চতুর্থ বারের মতো সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। শপথ নেওয়ার ছয় মাসের মাথায় পাঁচই জুন। ২০১৮ তে জারি করা প্রজ্ঞাপন বাতিল করে দেয় বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশন এবং কোটা পুনর্বহাল করা হয়। ফলে আবারও ফুঁসে ওঠে ছাত্রসমাজ।
এবার বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে সারা দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা রাস্তায় নামেন। এবারও তাদের দাবি কোটা সংস্কারের। সরকারের বেশ কিছু মন্ত্রী বলেন তাদের দাবির পক্ষে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করা হয়েছে এবং বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
শিক্ষার্থীদের ধৈর্য ধরতে বলেন তারা। শুনানির দিন ধার্য করা হয় ৭ আগস্ট। কিন্তু ছাত্রদের বুঝতে আর বাকি ছিল না যে এটা সরকারের একটা কৌশল কোটা পুনর্বহাল করার। কারণ বিচার ব্যবস্থা থেকে শুরু করে প্রশাসনের সব ক্ষেত্রই আওয়ামী লীগ সরকারের অনুগত। তাই তাদের দাবি ছিল আইন পাশ করে কোটা প্রথা সংস্কার করা।
২০২৪ সালের চোদ্দই জুলাই চীন পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদের রাজাকারের নাতিপুতি বলে অভিহিত করেন। তার মানে কি মুক্তি যোদ্ধা সন্তান নাতি পুতিরা কেউ মেধাবী নেই। যত রাজাকারের বাচ্চারাও নাতিপুতি হলে মেধাবী, তাই না? তার এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় সেদিন রাতেই উত্তাল হয়ে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গিনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের প্রায় সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষার্থীরা স্লোগান দিতে থাকেন, তুমি কে? আমি কে? রাজাকার রাজাকার। কে বলেছে কে বলেছে স্বৈরাচার স্বৈরাচার।
শিক্ষার্থীদের এই স্লোগানকে issue করে একে একে উস্কানিমূলক বক্তব্য দিতে থাকেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নফেল সহ অনেকেই। ওবায়দুল কাদের তার এক বক্তব্যে বলেন এসব রাজাকারদের প্রতিহত করতে ছাত্রলীগই যথেষ্ট। তার এই উস্কানিমূলক বক্তব্যের পর সভাপতি সাদ্দামের নেতৃত্বে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ঠিক ২০১৮ মতো এবারও সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করে ছাত্রলীগ। লাঞ্ছিত করা হয় নারী শিক্ষার্থ তবে এবার আর শিক্ষার্থীরা চুপ থাকেনি। তারাও পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধের মুখে বিশ্ববিদ্যালয় হল ছেড়ে পালাতে শুরু করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। একে একে দেশের প্রায় সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে ছাত্রলীগ মুক্ত ঘোষণা করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
ছাত্রলীগের চেষ্টা বিফলে গেলে মাঠে নামে পুলিশ। তারা শিক্ষার্থীদের উপর লাঠি চার্জ করে, টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে, এমনকি ছড়া গুলিও চালায়। একে একে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয় রণক্ষেত্রে। এমন অবস্থায় রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাহিত্যকে পুলিশ নিরস্ত্র অবস্থায় খুব কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে আবু সাহিদের হত্যার ভিডিও।
এতদিন চুপ থাকলেও আবু শহীদের মৃত্যুর পর মাঠে নামে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও। শুধু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় না সারা দেশের স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরাও যোগ দেয় আন্দোলনে। রাজধানী রাম উত্তরা যাত্রায় দেশের অনেক জায়গায় শুরু হয় তুমুল সংঘর্ষ। ১৭ তারিখও ইস্ট ওয়েস্ট ব্র্যাক এমআই এস টি বিশ্ববিদ্যালয় ও ইম্পেরিয়াল কলেজের ছাত্র সহ সারাদেশে অন্তত ১০ নিহত হন।
পরদিন অর্থাৎ ১৮ জুলাই ও চলে সংঘর্ষ। রামপুরহাট PTB র ভবনে ধরিয়ে দেওয়া হয় আগুন।
হেলিকপ্টার থেকে ছোঁড়া হয় গুলি। একের পর এক খবর আসতে থাকে ছাত্র হত্যার। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে থাকে এইসব ভিডিও। অবস্থা ক্রমেই আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। ১৮ জুলাই রাত থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয় ইন্টারনেট। ফলে পুরো বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় বাংলাদেশ। জারি করা হয় কারফিউ এবং রাস্তায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক বলেন শিক্ষার্থীরা data centre এ আগুন দিয়েছে তাই বন্ধ রয়েছে internet। কিন্তু internet বন্ধের পেছনে ছিল এক ভয়াবহ পরিকল্পনা৷ সারা দেশে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে শুরু হয় track down। বিভিন্ন বাহিনীতে থাকা সরকারের অনুগত লোকেদের নামিয়ে দেওয়া হয় রাস্তায়। এবার আর ছোঁড়া গুলি না। Chinese রাইফেল, অ্যাসল ট্রাইফেল ও পিস্তল নিয়ে একে একে গুলি করে মারা হয় নিরস্ত্র ছাত্রদের। শিক্ষার্থীদের বুকে ও মাথায় target করে চালানো হতে থাকে গুলি। উনিশ, বিশ একুশ জুলাই চলে এই গণহত্যা.
ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় গণহত্যার খবর খুব একটা প্রকাশ্যে আসেনি। কিন্তু ২৩ জুলাই ব্যবসায়ী ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর চাপে পড়ে ইন্টারনেট চালু করতে বাধ্য হয় সরকার। তবে বন্ধ থাকে ফেসবুক, হোয়াটস্যাপ সহ বেশ কিছু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। কিন্তু ভিপিএলের কল্যানে সামাজিক মাধ্যমে একে একে প্রকাশ পেতে থাকে নৃশংস গণহত্যার ভিডিও ও ছবি। শুধু তাই নয়, প্রতি রাতে দেশের বিভিন্ন এলাকায় রাস্তার লাইট বন্ধ করে ব্লক রেড চালিয়ে আন্দোলনের সাথে জড়িত শিক্ষার্থীদের তুলে নিয়ে যায় পুলিশ।
কারণ বুঝতে বাকি থাকে না কেন ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়েছিল? এরই মধ্যে তৎকালীন ডিবি প্রধান হারুন রশিদ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়কে নিরাপত্তার অজুহাতে ডিবি কার্যালয় আটকে রাখে এবং একটি লিখিত বক্তব্য পাঠ করায় যাতে বলা হয় তারা সব আন্দোলন প্রত্যাহার করেছেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা বুঝে ফেলে যে এই বক্তব্য জিম্মি করে আদায় করা। তাই তারা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। শেখ হাসিনার ক্ষমা চাওয়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সাধারণ সম্পাদকের পদত্যাগ এবং সকল গণহত্যার বিচার সহ নয় দফা দাবির প্রস্তাব করেন শিক্ষার্থীরা।
এদিকে শেখ হাসিনা কে BTP ভবন ভাঙচুর হওয়া মেট্রো রেলের স্টেশন পরিদর্শনে গিয়ে কান্না করেন। যা শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং শিক্ষকদের মধ্যে জন্ম দেয় চরম ক্ষোভ। তারা বলেন এতগুলো মৃত্যুর চেয়ে মেট্রোরেল আর বিটিভির মূল্য বেশি। একে একে রাস্তায় নেমে আসেন মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা, অভিভাবক, শিক্ষক, অভিনয় শিল্পী, ব্যান্ড তারকা সহ সর্বস্তরের মানুষ. এমনকি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ান রাজধানীর রিক্সা চালকরাও।
সরকার চাপে পড়ে আশ্বাস দেয় যে সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার করা হবে এবং আটক ছয় সমন্বয়কে ছেড়ে দিতেও বাধ্য হয়। নিহত শিক্ষার্থীদের স্মরণে ২১ জুলাই সরকারি ভাবে শোক ঘোষণা করা হয়। সারা দেশের ছাত্রসমাজ ও সাধারণ জনগণ সেই সব প্রত্যাখ্যান করে এবং কালোর বদলে লাল রং ধারণ করেন।
২১ জুলাই সম্পূর্ণ ফেসবুক চেঞ্জ লাল রঙের প্রোফাইল পিকচারে।
আগস্টের ২ তারিখ বিকেলে আনুমানিক দুই লক্ষ লোক জড়ো হন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে। সকল শ্রেণী পেশার মানুষের মধ্যে বয়ে যায় এক গণজোয়ার। অনেকেই একে বলেন দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় গণ অভ্যুত্থান। সেদিনই ছয় সমন্বয়ক একদফা দাবি তুলে ধরেন শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং ৪ অগাস্ট থেকে ডাক দেন অসহযোগ আন্দোলনে। শেখ হাসিনার শিক্ষার্থীদের আলোচনায় বসার আমন্ত্রণ জানান। তিনি বলেন গণভবনের দরজা সব সময় খোলা আছে। তবে পরদিনই অর্থাৎ ৩ আগস্ট উত্তরা কুমিল্লা, মুন্সিগঞ্জ সহ দেশের বেশ কিছু জায়গায় পুলিশ ও ছাত্রলীগ হামলা চালায়। সেদিনও নিহত হয় বেশ কয়েক জন।
৩ তারিখ রাতেই ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেন পরদিন থেকে প্রতি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে। এদিকে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ্জামান এক জরুরি বৈঠকে বসেন অন্যান্য সেনা কর্মকর্তাদের সাথে। সেই বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় সেনাবাহিনী আর গুলি চালাবে না। তারা সাধারণ মানুষের পাশে থাকবে। আর এই সিদ্ধান্তের পরই পরিস্থিতি পাল্টে যায় ছাত্রদের পক্ষে।
৪ আগস্ট রবিবার সকাল থেকেই অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেয় শিক্ষার্থীসহ নানা পেশার মানুষ। আন্দোলনকারীরা জড়ো হতে থাকে সাহাবাগ science lab সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায়। বেলা ১১ পর থেকেই তান্ডব শুরু করে অস্ত্রধারী আওয়ামী লীগ। যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এবং এদিন পুলিশ নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করে। সম্পূর্ণ কোটা আন্দোলনে এই ৪ আগস্ট ছিল সবচেয়ে রক্তাক্ত। এদিন পুলিশ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সাধারণ শিক্ষার্থীসহ শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়। শুরুতে কিছুটা পিছু হলেও অনেকটা পাবজি স্টাইলে পাল্টা আক্রমণ করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছাত্রলীগ কর্মীদের আক্রমণ থেকে শিক্ষার্থীদের রক্ষা করে সেনাবাহিনীর সদস্যরা। ফলে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা পিছু হটতে বাধ্য হয়।
৪ আগস্ট দুপুরে ঘোষণা শেষে ৬ আগস্ট লং মার্চ টু ঢাকা অনুষ্ঠিত হবে। তবে সারাদিনের চলার তাণ্ডবের কথা বিবেচনা করে ছয়শমনায়ক ঘোষণা দেন পর তিনি অর্থাৎ ৫ আগস্ট হবে long march two ঢাকা। আরো ঘোষণা আসে যদি সরকার আবার internet, মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেয়, অথবা ছয় সমন্বয়কদের যদি হত্যা বা গুমও করে ফেলে, তবুও যেন এই long march অব্যাহত থাকে। তারা সারা দেশের সাধারণ জনগণকে সেদিন রাস্তায় নেমে আসার আহ্বান জানান।
তাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে রাতেই ঢাকার দিকে যাত্রা শুরু করে মানুষ। যে যেভাবে পেরেছে কেউ ট্রাকে, কেউ সি. এন. জি তে, তবে অধিকাংশই পায়ে হেঁটে আসতে থাকেন ঢাকার দিকে। এদিকে ৫ আগস্ট সকাল থেকেই থমথমে ছিল রাজধানী ঢাকার পরিবেশ। সকাল সাড়ে দশটায় শিক্ষার্থীরা শহীদ মিনারে জড়ো হওয়া শুরু করলে আবারো একসঙ্গে নামে পুলিশ। ছোঁড়া হয় টিয়ারসেল, গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড। তবে এগারোটার পর থেকেই শাহবাগে নামতে শুরু করে সাধারণ মানুষের ঢল। বঙ্গভবন ও গণভবনে বাড়িয়ে দেওয়া হয় নিরাপদ এদিকে সকাল দশটায় শেখ হাসিনা তিন বাহিনীর প্রধান ও পুলিশের আইনজীবীকে ডেকে আরো বেশি কঠোর হওয়ার নির্দেশনা দেন। বেশ কয়েকটি সূত্র নিশ্চিত করেছে যে যেকোনো মূল্যেই তিনি ক্ষমতা ধরে রাখতে চেয়েছিলেন।
সেনাপ্রধান ওয়াকারুদ জামান শেখ হাসিনাকে পদত্যাগের উপদেশ দেন এবং বলেন পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণের বাইরে।
আইজিপিও বলেন পুলিশও বেশি সময় কঠোর অবস্থান ধরে রাখতে পারবে না। শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা ও পুত্র জয়ও বলেন পদত্যাগ করতে। পরে তিনি পদত্যাগের হন এবং জাতির উদ্দেশ্যে একটি ভাষণ রেকর্ড করতে চান।
এদিকে এগারোটার পর থেকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী সোনিয়াখরা, উত্তরা সাবার দিয়ে কয়েক লক্ষ লোক ঢাকায় প্রবেশ করে। শাহবাগে তৈরি হয় এক জনসমুদ্র এবং সেই জনসমুদ্র যাত্রা শুরু করে গণভবনের দিকে। পরিস্থিতি ও দূরত্ব বিবেচনা করে সেনাপ্রধান শেখ হাসিনাকে ৪৫ মিনিটে সময় বেঁধে দেন। তার ভাষণ রেকর্ডের প্রক্রিয়াও বাতিল করা হয়। দুইটি luggage নিয়ে গণভবন থেকে বিমান বাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে শেখ হাসিনা চলে আসেন তেজগাঁও পুরোনো বিমান বন্দরে। সেখান থেকে তিনি বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগ পত্র জমা দিয়ে আবার চলে যান বিমান বন্দরে। বিমান বাহিনীর একটি পরিবহণ বিমানে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা পালিয়ে যান দেশ থেকে।
দুপুর দুইটায় সেনাপ্রধানের জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেওয়ার কথা থাকে। কিন্তু সে ভাষণের সময় পিছিয়ে দেওয়া হয়। তবে দুইটার কিছু পর থেকে খবর প্রকাশিত হয়ে যায় যে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন এবং দেশ ছেড়েছেন। বাঁধভাঙা উল্লাসে ফেটে পরে শিক্ষার্থী সহ সকল শ্রেণীর পেশার মানুষ। ঢাকার প্রতিটি রাস্তায় নামে আনন্দ মিচ্ছেন। লোকে লোকারণ্য হয়ে যায় সারা দেশের সব রাজপথ। জনগণ সব বাধা উপরে পৌঁছে যায় গণভবনে। যদিও ততক্ষণে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন শেখ হাসিনা। উচ্ছাসে আনন্দে ভবন থেকে শেখ হাসিনা ব্যবহার করা জিনিসপত্র নিয়ে যেতে থাকে আমজনতা। যদিও সেদিন রাতের মধ্যেই প্রায় ৮০ ভাগ জিনিস ফিরিয়ে দেন সাধারণ মানুষ।
বেলা সাড়ে তিনটেয় সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ্জামান আনুষ্ঠানিক ভাবে জানান যে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন এবং শীঘ্রই দেশে একটি অন্তর্বর্তী কালীন সরকার গঠন হবে এবং সেই সরকারের অধীনে হবে নির্বাচন। অবশেষে পতন হলো বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় স্বৈরাশাসকের অনেকে হয়তো ভাবতে পারেন যে সামান্য এক কোটা সংস্কার আন্দোলন কিভাবে পনেরো বছর ধরে জেকে বসা এক শাসকের পতন ঘটায়। আসলে এই পতনের পিছনে শুধু কোটা সংস্কার ছিল না। সাধারণ মানুষের দীর্ঘ পনেরো বছরের ক্ষোভ বিরোধী রাজনৈতিক উপর চলা অত্যাচার সীমাহীন দুর্নীতি ও লুটপাট দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি, ছাত্রলীগ যুবলীগের অত্যাচার ও চাঁদাবাজি বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড ও গুম এবং সব শেষে শেখ হাসিনার অহংকার ও দাম্ভিকতার ফলে জনমনে যে ক্রোধের বারুদ জমা হয় সেই বারুদেই আগুন দেয় কোটা সংস্কার আন্দোলন। আর বিশ্বের ইতিহাস সাক্ষী। যেকোনো দেশের যেকোনো স্বৈরাশাসক যখনই ছাত্রদের বুকে গুলি চালায় তখনই তার পতনের দিন গণনা শুরু হয়।
জেনারেশন জেট বা জেম তাদের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে এনে দিয়েছেন নতুন স্বাধীনতা। এখন আমাদের সবার দায়িত্ব নিজ নিজ অবস্থান থেকে এই স্বাধীনতাকে রক্ষা করা।